| ০২ মে ২০২০ | ৪:০২ অপরাহ্ণ
চুক্তি আইনের বহুল প্রচলিত একটি মৌলিক নীতি হল-“Pacta Sunt Servanda” রোমান প্রবাদ যার অর্থ হল চুক্তি অবশ্য পালনীয়’। সিভিল, কমন এবং আন্তর্জাতিক বিচার ব্যবস্থায় এই নীতিটি ব্যাপক ভাবে প্রচলিত। প্রায় সকল দেশই ঘরোয়া ভাবে নিজ নিজ আইন এবং বিধিগুলোতে এই নীতির স্বীকৃতি দিয়েছে। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক পরম্পরার হাত ধরে চুক্তি আইন ১৯৭২ এর মাধ্যমে বাংলাদেশে এই নীতিটির প্রচলন হয়েছিল, যেটা বর্তমানে বাংলাদেশের কার্যকর আইনী কাঠামো। বাংলাদেশের এখতিয়ারের মধ্যে স্বাক্ষরিত সকল ধরণের চুক্তি এবং বাংলাদেশের বাইরে করা চুক্তি যেগুলি বাংলাদেশের ভেতরে সম্পাদনের জন্য করা হয় সেগুলি “প্রযোজ্য আইন” এর উল্লেখ থাকা সাপেক্ষে এই আইন দ্বারা পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হয়। উন্নয়ন অংশীদারদের দ্বারা সমর্থিত কাজগুলি, যেমন- বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, এডিবি, আইডিবি, জাইকা ইত্যাদি এফ.আই.ডি.আই.সি (ফিডিক) এর নির্ধারিত চুক্তির শর্তাবলি অনুসরণ করে।
ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অফ কনসাল্টিং ইঞ্জিনিয়ার্স (ফিডিক/ FIDIC), ১০২ টি সদস্য দেশ, এক মিলিয়নেরও বেশি প্রকৌশল পেশাদার এবং ৪০,০০০ ফার্মের প্রতিনিধিত্ব করে, ইঞ্জিনিয়ারিং পরামর্শক এবং নির্মাণ ফার্ম বা ইঞ্জিনিয়ারদের স্বার্থ সুরক্ষার জন্য এটি একটি বৈশ্বিক কণ্ঠস্বর। তবে এর চুক্তির শর্তাবলির আদর্শ মানদণ্ডের (প্যাটার্ন বা মডেল) কারণে এটি সর্বাধিক পরিচিত। বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অফ কনসাল্টিং ইঞ্জিনিয়ার্স (BACE) এর মাধ্যমে বাংলাদেশ ফিডিক এর সদস্য রাষ্ট। বি.এ.সি.ই এর মোট সদস্য সংখ্যা সাইত্রিশ, ১৯৭৫ সালে দেশের কন্সাল্টিং ইন্ডাস্ট্রির সুষ্ঠ প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করার লক্ষে একটা অলাভজনক পেশাজীবী সোসাইটি হিসাবে এটি প্রতিষ্ঠিত ও নিবন্ধিত হয়। বি.এ.সি.ই এর সদস্যরা দেশে বা বিদেশে যেখানেই কাজ করুক, এফআইডিকের চুক্তির শর্ত অনুসরণ করে, মাত্র ৮ থেকে ১০ টি ফার্ম দেশের বাইরে কাজ করে বা করেছে। দেশের অধিকাংশ ফার্ম ই ফিডিক এবং বিএসিই এর নিয়ম-কানুন মানতে আগ্রহী না, কারন যারা ফিডিকের সদস্য তাদের জন্য নির্মাণ শিল্পের জাতীয় (জাতীয় বিল্ডিং কোড ইত্যাদি) এবং আন্তর্জাতিক আইন মানা বাধ্যতামূলক।
কোভিড-১৯, এর কারনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লুএইচও) ৩০ জানুয়ারি ২০২০ তারিখে ২০১৯-২০ সালের করোনা প্রাদুর্ভাব কে জনস্বাস্থ্য জরুরী অবস্থা (আন্তর্জাতিক উদ্বেগ এর বিষয়) এবং ১১ই মার্চ ২০২০ তারিখে মহামারী ঘোষণা দেয়। ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অফ কমার্স (আই.সি.সি),ডব্লুটিও এবং অন্যান্য ব্যবসায়িক সংগঠন গুলো এই দিনগুলোতে বড়ই উদ্বিগ্ন। করোনাভাইরাস মহামারী ২০১৯-২০ চলাকালীন, লক-ডাউন, জরুরী অবস্থা, চলাচলের উপর বিধিনিষেধের কারণে চুক্তিভিত্তিক বেশিরভাগ পক্ষই তাদের বাধ্যবাধকতা পালন করতে না পারায় সাধারণ ও এফআইডিক চুক্তির আওতায় আন্তর্জাতিক এবং আন্ত-দেশিয় ব্যবসা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয়েছে। অনেক চুক্তির পক্ষ দ্বারাই এই পরিস্থিতির কাড়নে তাদের ক্রেতা, গ্রাহক, ডিলার, ঠিকাদার, পরামর্শক ইত্যাদির সাথে চুক্তি পালন করা সম্ভব হয় নি। সুতরাং এই চুক্তি পালনের বার্থতার ফলাফল কি হবে তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে।
সরকারি মেগা উন্নয়ন প্রকল্প থেকে বেসরকারি বাণিজ্যিক চুক্তি কোন কিছুই সম্পাদন করা সম্ভব হচ্ছে না, যার ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতি আজ হুমকির সম্মুখীন। যেকোনো পক্ষই চুক্তি সম্পাদনে ব্যার্থ হলে ফোর্স মেজার ঘোষণা করা যেতে পারে। তবে এই ধরনের ক্লজ/ দফা/ অনুবিধি লিখিত চুক্তিতে উল্লেখ থাকতে হবে, কিন্তু কোন প্রযোজ্য আইন, এই ধরনের ক্লজ চুক্তিতে অন্তর্ভুক্ত না থাকলেও পরোক্ষভাবে উত্থাপন করতে পারে। চুক্তির কোন পক্ষ, চুক্তিতে এই ক্লজ/ দফা অন্তর্ভুক্ত থাকলে তা ব্যবহার করতে পারে, আর যদি না থাকে তাহলে বাংলাদেশে বিদ্যমান বিকল্প প্রতিকার হিসাবে চুক্তি আইন ১৮৭২ এ পরোক্ষভাবে যে বিধান রয়েছে তার উপর নির্ভর করতে পারে। এই মতামত এটাও বলে যে যদি কোন কারনে, ফোর্স মেজার প্রয়োগ করা সম্ভব না হয় তাহলে পক্ষদ্বয়ের এটা পরখ করা উচিত, কোন বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি সংক্রান্ত ক্লজ, যেমন- মেডিয়েশন বা আর্বিট্রেশন যুক্ত আছে কি না। যদি থেকে থাকে, তারা চাইলেই যেকোনো একটি অথবা একটার অনুপস্থিতিতে অন্যটি, যেটা ফোর্স মেজার এর মূলনীতির সাথে প্রাসঙ্গিক, ব্যবহার করতে পারে এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি থেকে পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রে যা তাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে ছিল।
ফোর্স মেজার এই পরিভাষাটির অর্থ হল “সুপিরিয়র ফোর্স”, এটা চুক্তি পত্রের একটা সাধারণ প্রয়োজনীয় ক্লজ। এই ক্লজ মানুষের নিয়ন্ত্রণের বাইরে কোন অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতি বা অস্বাভাবিক পরিস্থিতি, যেমন- যুদ্ধ, দাঙ্গা, হরতাল, মহামারী অথবা আইনের ভাষায় যাকে দৈবদুর্বিপাক বলে (প্রবল সামুদ্রিক ঝড়, বন্যা, ভূমিকম্প, আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত ইত্যাদি) ক্ষেত্রে কোন পক্ষকে চুক্তি পালন থেকে অব্যাহতি দেয়। কোন পক্ষের যৌক্তিক-নিয়ন্ত্রণের বাইরে যে সকল ঘটনা, তা সাধারণত ফোর্স মেজারের অন্তর্ভুক্ত, তবে অবহেলা বা অন্যায় কাজ যার বাস্তবিকই এরূপ পক্ষের দায়িত্ব পালনে সক্ষমতার উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে তা এর অন্তর্ভুক্ত হবে না।
ফোর্স মেজারের ঘোষণার ফলে সম্পূর্ণ চুক্তিটি বাতিল হবে না,‘ডক্ট্রিন অফ সেভারেলিটি বা সেভারেলিটি মতবাদ অনুসারে’ চুক্তিটির বাকি অংশ রক্ষা পাবে। ‘ডক্ট্রিন অফ সেভারেলিটি’ এর অর্থ হল একটা চুক্তির কোন শর্ত যদি বাতিল, অবৈধ, নিষিদ্ধ বা অকার্যকরই হয়, তাহলে এই ধরনের বাতিল হওয়া, নিষিদ্ধ হওয়া বা অকার্যকরিতা চুক্তির অন্যান্য শর্তসমূহের কার্যকরিতাকে প্রভাবিত করবে না। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন একটা চুক্তির বাধ্যবাধকতা বজায় রাখতে এটাকে যথাযথ ভাবে সংশোধন করা উচিত।
ফিডিক, কর্মী এবং ফার্ম রক্ষা করার জন্য একটা গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক পদক্ষেপ নিয়েছে। এ সম্পর্কে জানার জন্য ফার্মগুলো ফিডিক এর গাইডেন্স অনুসরণ করতে পারে। এটার সবচেয়ে বড় উদ্বেগের বিষয় হল শ্রমিকদের বেতন। ফিডিক সুপারিশ করে “জীবন্ত মজুরি ধারণা” অথবা “লভ্যাংশ ভাগাভাগি” অথবা কর্মীদের অন্যান্য দিক দিয়ে সাপোর্ট দিয়ে মুজুরির টাকা শতকরা হারে কিছুটা হ্রাস করার মডেল অনুসরণ করতে। এছাড়াও এই মহামারী চলাকালীন ইনস্যুরেন্স কভারেজ আছে কি না, যদি থাকে তাহলে আর্থিক দায়, ব্যবসায়ে ব্যাঘাত এবং অন্যান্য সমস্যার জন্য কি ধরনের সুরক্ষা প্রদান করে তাও খতিয়ে দেখা উচিত। দায়বদ্ধতা এবং বীমা হল বোঝাপড়া ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার মূল স্তম্ভ এবং ফিডিকের চুক্তির ধরনের মূল চাবিকাঠি। ফিডিক বিশ্বব্যাপী মোকাবেলা করা বিভিন্ন অভিজ্ঞতা শেয়ার করার প্রস্তুতি নিচ্ছে, যা নির্মানশিল্প ফার্মগুলো এবং প্রকৌশল পরামর্শককে এই সংকটময় পরিস্থিতি মোকাবেলা করার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করবে।
চুক্তির ক্ষেত্রে ফিডিকের শর্তসমূহের জন্য আবশ্যক বিষয়গুলো ফোর্স মেজারের নিকট গ্রাহ্য। সময় বেধে নোটিশ দেওয়ার ব্যাপারে এটার সুনির্দিষ্ট নীতিমালা আছে। প্রশ্ন হল কখন নোটিশ পাঠানো শুরু করা উচিত? নিদৃষ্ট তারিখে, নিদৃষ্ট ঘটনা ঘটলে? অথবা পরবর্তী কোন তারিখে যখন কোন পক্ষ ঘটনা টি মেনে নিতে পারে এবং ঘটনাটির সম্ভাব্য পরিণতি সম্পর্কে নোটিশ দিয়ে অগ্রসর হতে পারে। চুক্তি অনুশীলনের ফিডিকের শর্তে এটি একটি খুব জটিল প্রশ্ন। জনপ্রিয় পদ্ধতি হল পরবর্তী কোন সময়ে ঘটনা ঘটার দিনের বর্ণনা করা এবং যেইদিন ঘটনাটি ঘটেছে বলে স্বীকার করা হয় নোটিশ দিয়ে সেই দিন থেকে অগ্রসর হওয়া। এটা করার পূর্বে নিশ্চিত হতে হবে যে, ঘটনাটি ফোর্স মেজার হিসাবে গৃহীত হয়েছে কি না বা গ্রহণযোগ্য কি না। ইন্ডিয়া এবং চায়নার মত কিছু দেশ এই সময়ের জন্য কোভিড-১৯ এর মহামারিকে ফোর্স মেজার হিসাবে ঘোষণা করেছে, এবং আমরা আশা করি এই ঘোষণা ওই সকল দেশের জন্য যথেষ্ট হবে। জাপান, আমেরিকা এবং থাইল্যান্ড এর মত কিছু দেশ জরুরী অবস্থা ঘোষণা করেছে, এখন এটার উত্তর জানা দরকার জরুরী অবস্থা কি ফোর্স মেজারের অন্তর্ভুক্ত। বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং কোরিয়ার মত কিছু দেশ সাধারণ লক-ডাউন এবং সাময়িক ছুটি ঘোষণা করেছে, এটার উত্তরও জানা দরকার তারা কি এই মহামারীর ঘটনাকে ফোর্স মেজার হিসাবে গ্রহণ করেছে কি না? জরুরী অবস্থা এবং ফোর্স মেজারের মধ্যে কি কোন সম্পর্ক আছে? আন্তর্জাতিক আইনানুসারে এটা হল অনিবার্য শক্তি বা অপ্রত্যাশিত ঘটনা যা কোন রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণের বাইরে এবং আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলতে বাধ্য করা বাস্তবিকই অসম্ভাব্য হয়ে পড়ে, এবং এটা জরুরী অবস্থার ধারনার সাথে সম্পর্কিত।
কোন পক্ষ যদি এই মহামারিকে ফোর্স মেজার হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করতে চায় তাহলে এই ঘটনাকে দৈবদুর্বিপাক এবং তার ফলে কার্যসম্পাদন না করা একই ঘটনার সূত্র ধরে সংঘটিত হতে হবে। কোন পক্ষ কি ফোর্স মেজার বা অস্বাভাবিক পরিস্থিতির অজুহাত দেখিয়ে দায়িত্বে অবহেলা করছে কি না বা দায়িত্ব পালন থেকে বিরত থাকছে কি না তা আদালত এবং শালিস কারিরা পরীক্ষা করে দেখতে পারেন। বিকল্প কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করে এই অস্বাভাবিক পরিস্থিতি এড়িয়ে গিয়ে দায়িত্ব পালন করা যেত কিনা? সুতরাং দাবিদারকে ন্যায় বিচার পাওয়ার জন্য নিষ্কলুষ ভাবে আসতে হবে।
বিচারিক পদক্ষেপের নজির: এখন আমরা সাম্প্রতিক দশকে বাংলাদেশ যে সমস্যাগুলোর সম্মুখীন হয়েছে সেগুলো সম্পর্কে, ICSID, বাংলাদেশ আদালত এবং ভারতীয় আদালতের মতামত আলোচনা করব।
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (বিআরইবি) বনাম বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) এবং অন্যান্য, ২০১৭, মামলাতে ফোর্স ম্যাজিউর সম্পর্কে বর্ণনা করেছে যে, বিআরইবি চুক্তি থেকে নিজেকে অব্যাহতি দেওয়ার জন্য “ফরসিয়েবিলিটি টেস্ট” পাস করতে পারেনি, যা পরিস্থিতি পরিবর্তনের কারণে ফোর্স ম্যাজিউর বলে ধারণা করা হয়েছিল। পরিস্থিতির পরিবর্তন বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তির আওতায় ফোর্স ম্যাজিউর বা চুক্তি আইনের অধীনে উত্তরকালীন অসম্ভবতা/ নৈরাশ্য বলে গণ্য হয়না। দাম বৃদ্ধিকে চুক্তি অনুযায়ী ফোর্স ম্যাজিউর হিসাবে দাবি করা যায় না। একই প্রয়োগ এইচআরসি শিপিং লিঃ বনাম এমভি এক্স–প্রেস মানসলু, এমভি এক্স–প্রেস রিজল্ভ এবং অন্যান্য, ২০০৬ তেও পরিলক্ষিত হয়।
নাইকো রিসোর্সেস (বাংলাদেশ) লিমিটেড এবং বাপেক্স এন্ড পেট্রোবাংলা (ICSID কেস নং এআরবি /১০/১১ এবং এআরবি/১০/১৮), ২০১৪ এর সালিস কার্যক্রমে ICSID বলেছে যে, একটি প্রতিবন্ধকতাকে ফোর্স ম্যাজিউর বিবেচনা করার জন্য একটি শর্ত হলো এটি “পূর্বানুমান করা যায় না”। চুক্তিপক্ষের মধ্যে নিয়ন্ত্রণকারী সুনির্দিষ্ট ধারা এবং যে পরিস্থিতিতে ফোর্স ম্যাজিউর দাবি করা হয় উভয়টি একটি সাধারণ নীতিকে নিশ্চিত করে। সে নীতিটি হলো চুক্তি সমাপ্তির আগে যে ঘটনাগুলো চুক্তিপক্ষ জানে সেগুলো ফোর্স ম্যাজিউর হিসাবে ধরা যাবে না। কারণ, সেটা পুর্বানুমানযোগ্য। আর এগুলোকে চুক্তি পালন না করার জন্য কোন অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না।
ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট এনার্জি ওয়াচডগ বনাম কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (২০১৭) মামলায় এরকম ফোর্স ম্যাজিউর এর সমস্যার মুখোমুখি হয়েছিল। কয়লার দাম বৃদ্ধিকে (ইন্দোনেশিয়ান আইন পরিবর্তনের কারণে) এমন ফোর্স ম্যাজিউর ঘটনা হিসাবে চিহ্নিত করা যেতে পারে কিনা? এটি নির্দিষ্ট শক্তি-উত্পাদনকারী সংস্থা (টাটা ও আদানী) যেগুলো ইন্দোনেশিয়া থেকে কয়লা আমদানি করছিল সেগুলোর প্রশ্ন ছিল। সুপ্রিম কোর্ট বলেছিল, যে কয়লার দাম বাড়ানো ব্যতিরেকে যদি চুক্তির মৌলিক ভিত্তি অপরিবর্তিত থাকে এবং কোনও নৈরাশ্যের ঘটনা না ঘটে, তবে শুধু দামবৃদ্ধিকে ফোর্স ম্যাজিউর হিসেবে ধরা যাবে না। নাভা পাওয়ার লিমিটেড (এনপিএল) বনাম পাঞ্জাব স্টেট পাওয়ার কর্পোরেশন লিমিটেড (পিএসপিসিএল) এবং কাঞ্চন উদ্যোগ লিমিটেড বনাম ইউনাইটেড স্পিরিটস লিমিটেড– এ ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট একই নীতি অনুসরণ করছিল।
সুতরাং, পক্ষসমূহ চুক্তি পর্যালোচনা করা শুরু করতে পারে, পরীক্ষা করে দেখতে পারে চুক্তির শর্ত দ্বারা ফোর্স মেজারের প্রয়োগ সমর্থিত কিনা কিংবা এটাকে বিস্তৃত করা যায় কি না? কোনও সরকারী বিধিনিষেধ বা ভ্রমণ সীমাবদ্ধতা কর্তব্য পালনে বাধা সৃষ্টি করবে কিনা? ভবিষ্যতের ক্ষতির প্রত্যাশা করা এবং এই সিদ্ধান্তে আসা উচিত যে ধারাটি উত্থাপন করতে গেলে শেষ পর্যন্ত চুক্তি বাতিল হতে পারে বা সংশোধন করার প্রয়োজন হতে পারে?
বাংলাদেশ সরকার ফোর্স মেজারের এই বিশাল উদ্বেগের ক্ষেত্রে পরিষ্কার পদক্ষেপ নিতে পারে, ব্যক্তিগত চুক্তি ছাড়াও সরকার বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থার অধীনে বিভিন্ন কার্যনির্বাহী চুক্তির পক্ষ। সরকার সাধারণ ছুটি এবং লক-ডাউন ঘোষণা করেছে, ডি.জি.এইচ.এস দেশব্যাপী মহামারী ঘোষণা করেছে, কিন্তু বিশেষজ্ঞরা সংশয় প্রকাশ করছে, এই ঘোষণাকে কি পক্ষসমূহ ফোর্স মেজার হিসাবে ব্যবহার করবে, না কি চুক্তি আইনের ৫৬ ধারা অনুযায়ী এটা পরোক্ষভাবে দৈব-দুর্বিপাকের অনুঘটক হিসাবে ব্যবহৃত হবে। আমি মনে করি যে, বাংলাদেশ সরকার যদি করোনা ভাইরাসের মহামারিকে স্পষ্টভাবে ফোর্স মেজার হিসাবে ঘোষণা করে, তাহলে অতি শীঘ্রই উদ্ভূত হওয়ার সম্ভাবনা আছে এমন অনেক মামলা এবং আইনি বিরোধ হ্রাস পাবে।
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অফ কনসাল্টিং ইঞ্জিনিয়ার্স (BACE) এবং আমি বিশ্বাস করি যে, ফিডিক সর্বোত্তম প্রযুক্তি ভিত্তিক পর্যবেক্ষণ প্রদান করে। জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের প্রতি অনুবর্তিতা, নির্মাণ এবং নির্মাণ শিল্প ফার্ম ও পরামর্শক সংস্থা সংস্কৃতিকে সুশৃঙ্খল সংস্কৃতিতে পরিণত করবে যা লক্ষ লক্ষ জীবন বাঁচাবে এবং বাংলাদেশে একটি সুস্থ জীবনযাত্রার বিকাশ ঘটবে। সরকার যদি নিয়মানুবর্তিতার বিকাশ ঘটাতে চায়, তাহলে এই সংস্কৃতির বিকাশ কে তরান্বিত করার পদক্ষেপ নিতে পারে। আমরা সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কে অনুরোধ করি বাংলাদেশের সকল প্রকার চুক্তির আইনগত ফলাফলের জন্য প্রস্তুতি নিতে এবং প্রাইভেট পার্টিরও উচিত তাদের চলমান চুক্তিগুলো পরীক্ষা করা।
লেখক: আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট।
মেইল: bnn.mir@gmail.com
সোম | মঙ্গল | বুধ | বৃহ | শুক্র | শনি | রবি |
---|---|---|---|---|---|---|
১ | ২ | ৩ | ৪ | ৫ | ||
৬ | ৭ | ৮ | ৯ | ১০ | ১১ | ১২ |
১৩ | ১৪ | ১৫ | ১৬ | ১৭ | ১৮ | ১৯ |
২০ | ২১ | ২২ | ২৩ | ২৪ | ২৫ | ২৬ |
২৭ | ২৮ |