| ২৯ এপ্রিল ২০২০ | ২:৩২ অপরাহ্ণ
কেবল বৈধ শিক্ষার্থীদের প্রতিটি হলের নীতিমালার আলোকে হলগুলোতে থাকতে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা গেলে বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘদিনের গড়ে উঠা গণরুম সংস্কৃতি অবসান ঘটবে বলে আশা প্রকাশ করছে প্রশাসন। এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠনগুলো সহযোগিতাও চেয়েছে প্রশাসন।
বুধবার করোনা ভাইরাস উত্তর পরিস্থিতি নিয়ে ‘প্রভোস্ট কমিটি’র সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে প্রভোস্ট কমিটির অনলাইন জুম প্লাটফর্মে ভার্চুয়াল সভা অনুষ্ঠিত হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হলে কেবল অবৈধ বা ছাত্রজীবন শেষ করা শিক্ষার্থীদের বদলে কেবল বৈধ শিক্ষার্থীদের রাখতে বড় চ্যালেঞ্জ হবে ছাত্রসংগঠনগুলো। কারণ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষাভাবে এখন কার্যত হলগুলোর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে ক্ষমতাসীন ছাত্রলীগ। হলগুলোতে কক্ষ দখলে রাখা বড় অংশই এখন ছাত্রলীগের নেতাকর্মী। নিয়মিত শিক্ষার্থীরা বৈধ হলেও সেখানে মানবেতর জীবনযাপন করে তারা। একটি কক্ষে ১০-১৫ জন গাদাগাদি করে অবস্থান করে, যাকে গণরুম বলা হয়।
দীর্ঘ ২৮ বছর পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন হয়। ছাত্র অধিকার আদায়ে সক্রিয় ভূমিকা রাখার কথা হলেও হলগুলোতে অবৈধদের তাড়াতে ও কেবল বৈধ শিক্ষার্থীদের থাকার বিষয়ে কিছুই করতে পারেনি ডাকসু নেতারা। বরং ডাকসুর সদস্যা তানভির হাসান সৈকত গণরুমের শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়িয়ে আন্দোলন করেছেন। যদিও ছাত্রলীগের একটি অংশের বিরোধীতায় আন্দোলনে সফল হতে পারেননি তিনি।
সভায় উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. নাসরীন আহমাদ, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দীন সংযুক্ত ছিলেন। সভায় করোনা ভাইরাস উত্তর সময়ে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি ও হলের সামগ্রিক পরিবেশ নিয়ে আলোচনা হয়।
শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিরসনে এবং আবাসিক হলের শিক্ষা ও জীবনমানসহ সামগ্রিক পরিবেশ উন্নয়নে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। সিদ্ধান্তগুলো হচ্ছে- বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পর শুধুমাত্র বৈধ শিক্ষার্থীরা সংশ্লিষ্ট হলের নীতিমালার আলোকে হলে অবস্থান করবে। যাদের ছাত্রত্ব নেই তারা কোনক্রমেই হলে অবস্থান করতে পারবে না। তাদেরকে হল প্রশাসন কর্তৃক বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে ব্যক্তিগত জিনিসপত্র নিয়ে সংশ্লিষ্ট কক্ষ/সিট ছেড়ে দিতে হবে। তীব্র আবাসন সংকট নিরসনে এর কোনো বিকল্প নেই বলে মনে করছে প্রশান।
হলের কোনো কক্ষের মেঝেতে কোনো শিক্ষার্থী অবস্থান করতে পারবে না। প্রয়োজনে যথাযথ নিয়মে, ডাবলিং করতে পারবে। হল প্রশাসন যে সকল কক্ষে খাট/বেড নাই ছুটিকালীন সময়ে সে সকল কক্ষে নিয়মমাফিক খাট/বেড সরবরাহ করার ব্যবস্থা নেবেন।
হলগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতিটি হলে নিয়মিত শিক্ষার্থীর চেয়ে ছাত্রত্ব শেষ করা অবৈধ শিক্ষার্থীর সংখ্যায় বেশি। বৈধ শিক্ষার্থীরা নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে সিট না পেয়ে ছাত্র রাজনীতি বিশেষ করে মিটিং মিছিলে অংশ নেবে এমন আশ্বাসে হলের গণরুমে থাকার সুযোগ পায়। পরবর্তীতে রাজনীতিতে সক্রিয়তা ও হলের নেতাদের মর্জির উপর ভর করে অন্য কোনো রুমে থাকার সুযোগ হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মনে করছে, প্রভোস্ট কমিটির সভায় নেওয়া সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা গেলে দীর্ঘদিনের গড়ে ওঠা কথিত ‘গণরুমের’ অবসান ঘটবে। এই ‘গণরুমের’ অবসান ও ‘যাদের ছাত্রত্ব নেই তাদের হলে অবস্থান না করার’ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনগুলোর আন্তরিক সহযোগিতা অত্যাবশ্যক বলেও অভিমত ব্যক্ত করা হয়।