মাত্র পাওয়া

বাংলাদেশের যে চরে কোনো নারী নেই!

| ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০ | ৫:৪৫ অপরাহ্ণ

কি শিরোনাম পড়ে অবাক হচ্ছেন। আসলে অবাক হওয়ারই কথা। ২০ হাজার মানুষের দুবলার চরে নেই কোনো নারী সদস্য।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির আয়োজনে বার্ষিক সুন্দরবন ভ্রমণে কটকা, হিরণ পয়েন্ট দেখার পর আমাদের গন্তব্য হয় দুবলার চর। চর হিসেবে পরিচিত হলেও স্থানটি মূলত কুঙ্গা ও মরা পশুর নদের মাঝে অবস্থিত একটি দ্বীপ। দুবলার চর কটকার দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং হিরণ পয়েন্টের দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত। এই চরকে এক কথায় শুঁটকির রাজ্য বলা যেতে পারে।
 
আমাদের ট্যুর গাইড শাকিল জানালেন, সুন্দরবনে ঘুরতে এলে এই স্থানটিতে না ঘুরে কেউ ফিরতে চান না। এমন কি শুধু এই দুবলার চরের উদ্দেশেও দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসে অনেক পর্যটক।

আমাদের সঙ্গে থাকা সুন্দরবনের নিরাপত্তা কর্মী শাহ্জাহানের কাছে জানতে পারলাম, দুবলার চরে মানুষের আনাগোনা থাকে বছরে মাত্র পাঁচ মাস। যার বেশির ভাগটাই শুঁটকিকে কেন্দ্র করে। 

সরকার কর্তৃক অনুমোদনপ্রাপ্ত প্রায় ২০ হাজার জেলে শুষ্ক মৌসুমে এখানে মাছ ধরার জন্য আসে এবং অস্থায়ী বাসস্থান তৈরি করে মাছ ধরা, শুঁটকি করাসহ আনুসঙ্গিক কাজে নিয়োজিত থাকে। এই সময়টাতে শুঁটকিকে উপলক্ষ করে প্রচুর পর্যটক এখানে ঘুরতে আসে, তাদের কাছে খুচরা শুঁটকি বিক্রির জন্য রয়েছে একটি বাজারও। এখানে আরো একটি কারণে লোকসমাগম হয়ে থাকে, তা হলো হিন্দুদের পুণ্যস্নান এবং রাসমেলা। প্রতিবছর নভেম্বর মাসে এই ধর্মীয় উৎসবটি অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। 

আমাদের ভ্রমণ লঞ্চ মাঝ নদীতে নোঙর করে ট্রলার নিয়ে দুবলার চরের দিকে যাত্রা করি। এবার ট্রলার থেকে নেমেই চোখের সামনে ভেসে উঠল দুবলার চরের শুটকী গ্রাম। দেখতে পেলাম ছড়ানো ছিটানো ছোট ছোট অসংখ্য ছনের ঘর, যেগুলোর বড় আঙ্গিনায় শুকাতে দেওয়া আছে হরেক রকমের মাছ। আশে-পাশেই অনেক লোককে দেখতে পেলাম। কেউ ঝুড়ি বোঝাই করে শুঁটকি মাথায় নিয়ে যাচ্ছে, কেউ কেউ শুঁটকি বাছাই করছে, কেউ কেউ বসে বসে মাছ ধরার জাল ঠিক করছে। 

এবার গ্রামের ভেতর ঢুকতেই ট্যুরের সুমন নামের আরেকজন গাইড জানান, এ গ্রামে কোনো নারী নেই। বিষয়টি জেনেই কেমন যেন কৌতুহল জন্মাল। পরক্ষণেই তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, এটার কারণ কি সুমন ভাই। সে জানায়, চরে কেউ নারী নিয়ে আসলেই ডাকাতরা ধরে নিয়ে যায়। 

সুমন ভাইয়ের কথা ধরেই এরকম অনুসন্ধানে নেমে গেলাম। তন্ন তন্ন করে খুঁজেও পেলাম না কোনো নারী। শুটকি কেনার জন্য বাড়ির ভেতরে গিয়েও দেখা মেলেনি কোনো নারীর। বরং রান্না বান্নার কাজে ব্যস্ত দেখলাম পুরুষদেরকেই। 

একটি বাড়িতে দেখলাম, মাছ ধুয়ে রান্নার জন্য সবজি কাটছেন পুরুষরাই। তারপরও কথার সত্যতা নিশ্চিত হতে আরো বেশ কয়েকজনের কাছে বিষয়টি জানতে চাইলাম। সবারই একই উত্তর চরে কোনো নারী নেই। কেউ কেউ বললেন, অস্থায়ী আবাসের কারণেই তারা নারীদের সঙ্গে করে আনেন না।

তবে আমরা বেশ কিছু নারীর দেখা পেয়েছিলাম, যারা আমাদের মতোই ঘুরতে এসেছিলেন। যারা সন্ধ্যা রাতেও দুবলার চরে  ঘুরে বেড়াচ্ছালেন। তবে ডাকাতদল তাদের কোনো ক্ষতি করেন না বলেও জানতে পারলাম অনেকেরই কাছে।

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

Calendar

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০৩১  

এক ক্লিকে বিভাগের খবর

div1 div2 div3 div4 div5 div6 div7 div8