| ১৭ এপ্রিল ২০২০ | ৪:৩৫ অপরাহ্ণ
কোভিড -১৯ পুরো যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে যেভাবে ছড়িয়ে পড়েছে, তারমধ্যেই প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সামনের মাসগুলোয় রাজ্যগুলোর অর্থনীতি পুনরায় চালু করার বিষয়ে গভর্নরদের দিকনির্দেশনা দিয়েছেন।
“ওপেনিং আপ আমেরিকা এগেইন” শীর্ষক ওই নির্দেশনায় তিনটি পর্যায়ের রূপরেখা তুলে ধরা রয়েছে যাতে রাজ্যগুলো ধীরে ধীরে তাদের লকডাউন শিথিল করতে পারে।
মি. ট্রাম্প গভর্নরদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তারা কেন্দ্রীয় সরকারের সহায়তায় এই প্রক্রিয়াটি পরিচালনা করবেন।
যুক্তরাষ্ট্রে ছয় লাখ ৫৪ হাজার ৩০১ জনের মধ্যে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে এবং ৩২ হাজার ১৮৬ জন মারা গেছে।
মি. ট্রাম্প পরামর্শ দিয়েছেন কিছু রাজ্য এই মাসে আবারও চালু হতে পারে।
হস্পতিবার নিয়মিত ব্রিফিংয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ঘোষণা দেন যে “আমাদের এই যুদ্ধের পরবর্তী পদক্ষেপ হল- আমেরিকা আবার খুলে দেয়া”।
“আমেরিকা মুক্ত থাকতে চায় এবং আমেরিকানরাও মুক্ত থাকতে চান,” তিনি বলেন। “একটি জাতীয় অবরোধ কোন দীর্ঘস্থায়ী সমাধান নয়।”
তিনি বলেন যে দীর্ঘায়িত লকডাউনের কারণে জনস্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষতি হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। তিনি মাদকের অপব্যবহার, মদের অপব্যবহার, হৃদরোগ এবং অন্যান্য “শারীরিক ও মানসিক” সমস্যা “অনেক বেড়ে যাওয়ার” বিষয়ে সতর্ক করেছেন।
মি. ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেছেন যে, সুস্থ নাগরিকরা এমন পরিস্থিতিতে কাজে ফিরতে পারবেন।
তিনি বলেন, আমেরিকানদের আহ্বান জানানো হবে তারা যেন সামাজিক দূরত্বের বজায় রাখেন এবং অসুস্থ হলে বাড়িতে থাকেন।
তিনি বলেন যে মার্কিন অর্থনীতির পুনরায় চালু করার কাজ খুব সাবধানে ধাপে ধাপে সম্পন্ন করা হবে তবে তিনি রাজ্য গভর্নরদের “খুব তাড়াতাড়ি দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার” আহ্বান জানিয়েছেন, তারা কী করতে চান তার উপর নির্ভর করে।
এর খুব অল্প সময়ের মধ্যেই, কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার শীর্ষস্থানীয় ডেমোক্র্যাট ন্যান্সি পেলোসি নতুন নির্দেশিকাগুলোকে “অস্পষ্ট ও অসঙ্গত” বলে অভিহিত করেছেন।
তিনি বলেন, এসব নির্দেশনা বিজ্ঞানীদের পরামর্শ উপেক্ষা করার পাশাপাশি দেশজুড়ে দ্রুত করোনাভাইরাস শনাক্তের পরীক্ষা চালাতে প্রেসিডেন্ট যে ব্যর্থ হয়েছেন, সেটাকেই ফুটিয়ে তুলেছে।
লকডাউন শিথিল করার সময়সীমা এবং ব্যবসা পুনরায় চালু করা নিয়ে গভর্নরদের সাথে আলোচনা করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। – তবে তিনি এখন স্বীকার করেছেন যে তার এ ধরণের নির্দেশনা জারি করার ক্ষমতা সীমাবদ্ধ।
বৃহস্পতিবার এই আহ্বান জানানোর সময় মিঃ ট্রাম্প গভর্নরদের বলেন: “আপনারা নিজেরা নিজেদের সিদ্ধান্ত নেবেন”
“কারণ আপনারাই আপনাদের রাজ্য পরিচালনা করবেন, আমরা আপনাকে সহায়তা করব” তিনি বলেন।
বুধবার, হোয়াইট হাউজে করোনাভাইরাস টাস্ক ফোর্সের নেতা ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ২৪% অঞ্চলে কোনও করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রের অর্ধেক রাজ্যে এই ভাইরাস শনাক্তের সংখ্যা আড়াই হাজারেরও কম।
ট্রাম্প প্রশাসন এর আগে লকডাউন তুলে দেয়ার সম্ভাব্য তারিখ হিসাবে পহেলা মে’র কথা উল্লেখ করেছেন।
বুধবার মিঃ ট্রাম্প বলেছেন যে কয়েকটি রাজ্য তার চেয়েও লকডাউন শিথিল করতে পারে।
তবে কিছু স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এবং রাজ্য গভর্নর খুব শীঘ্রই অর্থনীতি আবার চালু করার বিষয়ে সতর্ক করেছেন।
মঙ্গলবার, সরকারের শীর্ষ সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ অ্যান্টনি ফৌসি এপি নিউজকে বলেছেন পহেলা মে দেশের সব অঞ্চল খুলে দেয়া বাড়াবাড়ি হতে পারে, কারণ সামাজিক দূরত্ব তুলে নেওয়ার আগে একটি শক্তিশালী পরীক্ষা ও ট্রেসিং ব্যবস্থার প্রয়োজন হবে।
নিউইয়র্কের গভর্নর অ্যান্ড্রু কুওমো বৃহস্পতিবার বলেছেন যে তাঁর রাজ্য ১৫ই মে অবধি স্টে অ্যাট হোম-অর্থাৎ বাড়ির ভেতরে থাকার নির্দেশনার অধীনে থাকবে।
যুক্তরাষ্ট্রে প্রাদুর্ভাবের কেন্দ্রস্থল এই রাজ্যের কর্মকর্তারা বলেছেন, পরিস্থিতি এই সপ্তাহে স্থিতিশীল হওয়ার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে, যদিও এখনও প্রতিদিন শত শত মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে।
মিশিগান, ওহাইও, উইসকনসিন, মিনেসোটা, ইলিনয়, ইন্ডিয়ানা এবং কেনটাকি রাজ্য প্রধানরা ঘোষণা করেছেন যে তারা এই অঞ্চলগুলো পুনরায় চালু করার জন্য একসঙ্গে কাজ করবেন।
বৃহস্পতিবার একটি বিবৃতিতে তারা বলেছেন, “আমরা স্বীকার করেছি যে আমাদের অর্থনীতি একে অপরের উপর নির্ভরশীল এবং এই অর্থনীতিকে আবার নিরাপদে চালু করতে আমাদের একসাথে কাজ করতে হবে যাতে পরিশ্রমী লোকেরা কাজে ফিরে যেতে পারেন এবং ব্যবসায়ীরা যেন তাদের নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারেন,” বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে তারা এ কথা বলেছেন।
ওই বিবৃতিতে লকডাউন শিথিল করার কোন সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়নি, তবে গভর্নররা বলেছেন যে তারা ধাপে ধাপে পদক্ষেপ নেয়ার পরিকল্পনা করছেন।
মিশিগানে ভাইরাসজনিত কারণে ১৭০০ জনের বেশি লোক মারা গিয়েছেন, গভর্নর গ্রেচেন হুইটমারের কঠোর লকডাউন ব্যবস্থার মধ্যেও এতো মৃত্যুর ঘটনা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।
বুধবার, লকডাউনের সময়সীমা বাড়িয়ে দেওয়ার ঘোষণা দেওয়ার পরে বাসিন্দারা রাস্তায় নেমে আসেন।
বিবিসি