| ২৩ জুলাই ২০২১ | ১০:৪৫ অপরাহ্ণ
শুনেছি সুখের দিনে দুঃখের কথা বলতে নেই তাই হয়তো ওদের মতো দুঃখী মানুষের কথা মনে করে কেউ সুখের গাঢ়ত্ব কমাতে রাজি নয়। কিন্তু এই সুখের দিনেও কেন জানি আমার আজ ওদের মতো দুঃখীদের নিয়ে লিখতে মনে ধরলো। জানি আমার এ লেখায় ওদের জীবনধারা বা জীবনের চলার গতি কোনটাই পরিবর্তন করতে পারবেনা তবে এদের দুঃখ -কষ্ট কিছুটা হলেও প্রকাশ পাবে আর এটাই আমার লিখার সার্থকতা।
ঈদ আসে ঈদ যায় ওরা ওদের মতোই থেকে যায়। ঈদটা যে ওদের কাছে অন্য আট- দশটা সাধারণ দিনের মতোই। “ঈদ মানে আনন্দ ঈদ মানে খুশি ” এই বাক্যটি ওদের কাছে একটা বাক্যেই সীমাবদ্ধ বাস্তব জীবনের এর কোন প্রতিফলন নেই। ঈদের এই একটা দিনকে ঘিরে আপনার, আমার সন্তানের কত-শত পরিকল্পনা, কত-শত আবদার। ঈদের দিন আব্বু এবার ঈদে আমি এটা কিনবো, ওটা কিনবো, এখানে ঘুরতে যাবো, ওখানে ঘুরতে যাবো, আম্মু ঈদের দিন এটা রান্না করবে ওটা রান্না করবে, আরো কত-শত আবদার।
আর যে শিশুগুলোর আজকে পরিকল্পনা করতে হয় আগামীকাল কোথায় থাকবে, কি খাবে বা খেতে পারবে কিনা? তাদের ঈদের জন্য আলাদা পরিকল্পনা করা নিষ্প্রয়োজন।
যাদের কোন আপনজনই নেই তারা আপনজনের সাথে ঈদ কাটার প্রয়োজনবোধ করবে কি করে?
যাদের আবদার করার মতো কেউ নেই তারা আবার আবদার করবে কার কাছে?
এ তো সুদিনের সুমসয় থেকে বঞ্চিত হওয়ার কথা বললাম। এখন একটু অন্য দিকে নজর দেয়। আপনার সন্তানের মতো এরাও অসুস্থ হয়, এদের জ্বর হয়, সর্দি হয়, কাশি হয়, পেট ব্যথা হয়, মাথা ব্যাথা হয় শুধু হয়না আপনার, আমার সন্তানের মতো সেবা-যত্ন। আচ্ছা ভাবুনতো একটি শিশু হঠাৎ গভীর রাতে প্রচণ্ড জ্বরে রাস্তায় অথবা রেল স্টেশনে শুয়ে ছট-ফট করছে তখন কি অবস্থা হয় শিশুটির? হ্যা, এটাই ওদের জীবন।
বলছিলাম ” আমাদের দ্বারা তৈরি আমাদের দেশের পথশিশুদের কথা”। আমার এ’কথা শুনে অনেকই হয়তো অবাক হয়ছেন কেউ কেউ হয়তো আবার আমার দিকে আঙ্গুলও তুলেছেন। আমাদের দ্বারা তৈরি পথশিশু বলার মানে কি?
যারা অবাক হয়েছেন এবং যারা আঙ্গুল তুলেছেন তাদের কাছে আমার দু’টি প্রশ্ন। ওরা কেন পথশুশু?
আপনি, আমি পথশিশু নয় কেন?
এই দু’টি প্রশ্ন নিয়ে একটু ভেবে নিবেন তারপর যদি আপনার আঙ্গুল তুলার ইচ্ছে হয় তুলবেন।
পৃথিবীর সকল শিশু নিস্পাপ হয়ে জন্মগ্রহণ করে। শিশুদের পাপ-পুণ্য বুঝার ক্ষমতা নেই তাই তাদের কোন পাপও নেই। তাহলে শিশুদের নামের পূর্বে কেন এমন ট্যাগ ব্যবহার করা হয়। “কেন ওদেরকে পথশিশু বলা হয়? কেন অন্য আট-দশটা শিশুর মতো সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয় এরা? কেন সমাজের অন্য শিশুদের থেকে আলাদা করে দেখা হয় এদের?
আপনার, আমার মতো কিছু মানুষের জন্যই আজ এরা পথশিশু। জন্মের পর আপনি, আমি পথ ব্যতীত কোন পথ দেখাতে পারিনি বলেই এরা পথশিশু।
আমাদের দায় আমাদেরই নিতে হবে দেশে যারা পথশিশু তাদের মৌলিক চাহিদা পূরণে সরকারের পাশি-পাশি সাধারণ মানুষের এগিয়ে আসতে হবে তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল হতে হবে। দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে হবে। আপনার, আমার নিজ সন্তানের প্রতি যে রকম দৃষ্টিভঙ্গি তাদের প্রতিও সেরকম দৃষ্টিভঙ্গি সৃষ্টি করতে হবে।
তাই আসুন পথশিশুদের পাশে দাড়ায়, না ভুল বললাম শিশুদের পাশে দাড়ায়। শিশুরা কখনো পথের হয়না।
লেখকঃ ইমরান হোসাইন
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।