চলে এসেছে কুরবানির ঈদ, আর এই কুরবানির ঈদ পশু কুরবানিকে ঘিরেই বেশি আনন্দময় হয়ে ওঠে। বিভিন্ন প্রজাতির ছোট-বড় গরু দিয়ে হাট-বাজার জমে ওঠে। চারদিকে অন্যরকম এক আমেজ তৈরি হয় এই পশু ক্রয়-বিক্রয়ে নিয়ে। মূলত কুরবানির ঈদের যে আনন্দ সেটা ঈদের দিনের চেয়ে পূর্বেই বেশি দেখা যায়।
কে? কেমন? কত দামে? কি গরু ক্রয় করলো? উচ্চতা কেমন? এসব বিষয় নিয়ে মানুষের মাঝে এক ধরণের কৌতূহল সৃষ্টি হয়। আর এই কৌতূহল মেটাতে মানুষ হাটে – বাজারে ছুটা-ছুটি করে গরু দেখার জন্য। ঈদের পূর্বের পশুর হাটের এক-একটি দিন হয়ে ওঠে ঈদের দিনের মতো। কিন্তু সবচেয়ে কষ্টের বিষয় হচ্ছে যে পশুকে ঘিরে আমাদের এতো আনন্দ এতো উল্লাস আমরা সেই পশুর প্রতি ওয়ে ওঠি অমানবিক।
আপনি যদি ভদ্র সমাজের ভদ্র মানুষ হয়ে থাকেন তাহলে পশু যাতায়াত ব্যবস্থার দিকে লক্ষ করলেই খুব সহজেই আপনার পশুর প্রতি এই অমানবিকতার দৃশ্য চোখে পড়বে। আমাদের দেশে পশু যাতায়াতের যানবাহন হিসাবে ট্রলি কিংবা ট্রাকই ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এসব ট্রলি, ট্রাকে যে পরিমাণ জায়গা থাকে পশু বহন করার মতো তারচেয়ে অতিরিক্ত পশু তুলা হয় শুধুমাত্র কিছু টাকা যাতায়াত খরচ কমানোর জন্য। যার ফলে গাদা-গাদি সৃষ্টি হয়। তার উপর একটি পশুর সাথে আরেকটি পশুকে এমন ভাবে দড়ি দিয়ে বাঁধা হয় যেন একটির উপর আরেকটি পরে আছে। ইচ্ছা করলেও পশু গুলো তাদের প্রয়োজনে একটু নাড়া-চাড়া করতে পারেনা। কেউ কেউ আবার পশুর চোখে মরিচের গুঁড়া দেয় যাতে করে পশু গুলো চোখের যন্ত্রণায় ঘুমাতে না পারে কারণ ঘুমালে যে জায়গায় বেশি প্রয়োজন হবে আর জায়গা বেশি প্রয়োজন হলে যে যাতায়াত খরচও বেশি হবে। বিষয়টা হলো এরকম কুরবানির সময় পর্যন্ত কোন রকম প্রাণটা বাঁচিয়ে রাখতে পারলেই হলো।
আচ্ছা আপনি কখনো চোখে মরিচের গুঁড়া দিয়েছেন না দিলে দিয়ে দেখবেন কেমন লাগে?
আপনি ভাবেনতো আপনার চুলকানি পাচ্ছে কিন্তু আপনি চুলকাতে পাচ্ছেন না এটা কতটা যন্ত্রণার বিষয়?
আপনি কোন রকম নাড়াচাড়া না করে এক জায়গায় কতক্ষন দাড়িয়ে থাকতে পারবেন?
যে বা যারা পশুর বহনে এরকম অমানবিকতার পরিচয় দেয় তাদেরকে এই প্রশ্নগুলো করা হলে খুব সহজে তাদের কাছ থেকে একটা উওর পাওয়া যাবে। উওরটা হলো এরকম “ওরাতো পশু”। এখন আমার প্রশ্ন হলো পশুদের কি ব্যথা, আঘাত এগুলোর ইন্দ্রিয় অনুভূতি নেই? যদি থাকে তাহলে অবশ্যই তারা মানুষের মতো কষ্ট পায় কিন্তু মানুষের মতো চিৎকার করে কান্না করতে পারেনা অথবা সেই কান্না মানুষ শুনতে পায়না আর শুনতে পেলেও মানুষ কতটা সদয় হতো তা সন্দিহান।
আর আপনাদের কথার সাথে তালমিলিয়ে আমি বলতে চাই হে ” ওরা পশু আপনারা মানুষ” তাই পশুর সাথে মানুষের মতো আচরণ করুন পশুর মতো নয়।
লেখক: ইমরান হোসাইন
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।